বাংলাদেশে জমি বা ভূমি কেনা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগের একটি। তবে অনেকেই কাগজপত্র ঠিকভাবে যাচাই না করেই জমি কিনে নানা ঝামেলায় পড়েন—যেমন দখল সমস্যা, দলিল জালিয়াতি, বিরোধপূর্ণ মালিকানা ইত্যাদি। তাই জমি কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যাচাই করে নেওয়া খুবই জরুরি।
এই ব্লগে আমরা জানবো, ভূমি কেনার আগে কোন ৭টি বিষয় অবশ্যই যাচাই করবেন।
১. খতিয়ান যাচাই
খতিয়ান বা Record of Rights হচ্ছে ভূমির মালিকানা সম্পর্কিত প্রাথমিক দলিল। আপনি যেই জমি কিনতে যাচ্ছেন, তার সর্বশেষ (সর্বাধুনিক) খতিয়ান সংগ্রহ করুন – যেমন SA, RS, বা BS খতিয়ান।
- বাছাই করুন: জমির দাগ নম্বর ও মৌজা সঠিক আছে কিনা।
- তথ্য মিলিয়ে দেখুন: মালিকের নাম ও জমির পরিমাণ।
২. দলিল যাচাই
মূল মালিকানার প্রমাণ হলো দলিল। বিক্রেতার নামে রেজিস্ট্রিকৃত বৈধ দলিল আছে কিনা তা যাচাই করুন।
- সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল চেক করুন
- মিথ্যা বা জাল দলিলের সম্ভাবনা খুঁজে দেখুন
৩. নামজারি (Mutation) আছে কিনা
নামজারি মানে হলো, মালিকানা হস্তান্তরের পর তা সরকারিভাবে রেকর্ডভুক্ত করা।
যদি বিক্রেতা দলিল অনুযায়ী মালিক হন, কিন্তু নামজারি না করিয়ে থাকেন, তবে ভবিষ্যতে আপনার মালিকানা প্রমাণে সমস্যা হতে পারে।
৪. ভুমি দখল অবস্থা
জমি শুধু কাগজে থাকলেই হবে না—বাস্তবে জমিটি কার দখলে আছে তা দেখতে হবে।
- স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলুন
- জমিতে গিয়ে দেখে আসুন জমি খালি কিনা বা কেউ ব্যবহার করছে কিনা
৫. দাগ ও পরিমাপ যাচাই
জমির দাগ নম্বর ও পরিমাপ মানে একে অপরের সাথে মিলিয়ে দেখা। অনেক সময় বিক্রেতা বেশি জমির কথা বলেন, কিন্তু সরকারি রেকর্ডে কম থাকে।
- সার্ভেয়ার বা পেশাদার পরিমাপক দিয়ে জমি মাপুন
- সঠিক দাগ নম্বর মিলিয়ে নিন খতিয়ানের সাথে
৬. মামলা বা বিরোধ আছে কিনা
অনেক জমি বিক্রি হয় যেগুলোর উপর মামলা চলছে বা কোনো ধরনের বিরোধ রয়েছে।
- স্থানীয় ভূমি অফিসে খোঁজ নিন জমি মামলায় আছে কিনা
- আদালতের ওয়েবসাইটেও তথ্য যাচাই করা যায় এখন
৭. পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ভিত্তিক বিক্রি কিনা
অনেক সময় জমি বিক্রির জন্য আসল মালিক কাউকে Power of Attorney (পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি) দিয়ে দেন। এমন ক্ষেত্রে যাচাই করতে হবে:
- পাওয়ার অফ অ্যাটর্নিটি বৈধ কিনা
- আদালত কর্তৃক নথিভুক্ত হয়েছে কিনা
- কতদিনের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে
উপসংহার
ভূমি কেনা শুধু অর্থের বিষয় নয়, বরং সতর্কতা ও সচেতনতারও ব্যাপার। সঠিকভাবে কাগজপত্র যাচাই না করে জমি কেনা মানে ভবিষ্যতে নিজেকে বিপদে ফেলা। আপনি যদি উপরের বিষয়গুলো যাচাই করে ভূমি ক্রয় করেন, তবে ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে।
অবশ্যই একজন আইনজীবী বা ভূমি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে।